চট্টগ্রামে সারোয়াতলীতে ২৫০ একর জমিতে বোরো আবাদে অনিহা কৃষকদের
চট্টগ্রামে সারোয়াতলীতে ২৫০ একর জমিতে বোরো আবাদে অনিহা কৃষকদের
এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে বোয়ালখালীর সারোয়াতলীতে ৭টি সেচ স্কিমের আওতাধীন ২৫০ একর জমিতে চলতি বছর বোরো ধানের আবাদ করবেন না বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। গত বছর রায়খালী খালের পানি ক্ষেতে সেচ দেওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এতে আর্থিক লোকসান গুণতে হয় কৃষক ও সেচ স্কিম ম্যানেজারদের। এনিয়ে তারা বিভিন্ন দপ্তরে ধনা দিয়ে ও এর সুরাহা পাননি বলে জানিয়েছেন। ফলে চলতি বছর নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চান না তারা।
৫ নং সারোয়াতলীর মাঝির পাড়া বিলের সেচ স্কিম ম্যানেজার মো. নুরুল আবচার বলেন, গত বছর বোরো আবাদ করে ধান তো দূরের কথা খড়ও পাইনি। সেচের পানিতে কারখানার লবণ ও বিষাক্ত কেমিক্যাল থাকায় সব ক্ষেত জ্বলে পুড়ে নিশ্ব। একই কথা জানিয়েছেন কঞ্জুরি বিলের স্কিম ম্যানেজার শেলু, বেঙ্গুরা মাদ্রাসা উত্তর রায়খালী বিলের স্কিম হামিদুল হক চৌধুরী, কৃষক ইদ্রিস ও ইউসুফ। তারা বলেন, সেচের পানি দিয়ে শীতকালীন সবজি ক্ষেত করেও লোকসানে পড়তে হয়েছ। ফলে বোরো ধানের বীজতলা করলেও খালের পানি দিয়ে বোরো আবাদ করা সম্ভব নয়। কৃষকেরা আরও জানান, রায়খালী খালের পানি ৭টি স্কিম শুকনো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য সেচ দেয়। এসব সেচ স্কিমের আওতায় ৫ শতাধিক কৃষক প্রায় ২৫০ একর জমিতে বোরো ও শীতকালীন শাক সবজির চাষ করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। কিন্তু গেল বছর কারখানার লবণ ও বিষাক্ত কেমিক্যালের কারণে বোরো ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, রায়খালী খালের মুখে থাকা লবণ ও শিল্প কারখানার বর্জ্য ফেলার কারণে পানিতে অতিমাত্রায় লবণ এবং বিষাক্ত কেমিক্যাল ছড়িয়ে পড়ছে। এতে জলজ প্রাণী, ক্ষেত খামার ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন কৃষকেরা। কৃষকদের অভিযোগ, রায়খালী খালের পাড়ের কারখানাগুলো লবণ পরিশোধনের পানি ও শিল্প কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্য খালে ফেলছে। এতে খালের পানি দূষিত হচ্ছে। এই পানি দিয়ে সেচ দিলেই ক্ষেত বিবর্ণ হয়ে মরে যায়। ফলে গত বছর বোরো আবাদ করে ৫০০ শতাধিক বর্গা চাষীকে বিপাকে পড়েন।
বিএডিসি দোহাজারী জোনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ আলম বলেন, বোয়ালখালীতে বিএডিসির ২৪টি সেচ স্কিম প্রকল্প চালু আছে। আরও কয়েকটি দেওয়া হবে। এছাড়া চাষাবাদের জন্য খাল খননসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে সারোয়াতলী ইউনিয়নের রায়খালী খালের সেচ স্কিমগুলো লবণ ও বিষাক্ত কেমিক্যালের কারণে চালু করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আতিক উল্লাহ বলেন, এবার উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮১০ হেক্টর জমিতে। সারোয়াতলী ইউনিয়নের রায়খালী খালের স্কিমগুলো লবণ ও কেমিক্যালের কারণে চালু করতে না পারলে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। গত বছর ও কৃষকদের লোকসান গুণতে হয়েছিলো।
গতকাল ১১ জানুয়ারী শনিবার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন চট্টগ্রাম রিজিওনের নির্বাহী প্রকৌশলী ফাতেমা আক্তার জেনি ও বিএডিসির কর্মকর্তারা বোয়ালখালী উপজেলার বেশ কয়েকটি সেচ স্কিম প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এসময় কৃষক ও স্কিম ম্যানেজাররা খালের পানি দূষণের বিষয়টি তুলে ধরেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী ফাতেমা আক্তার জেনি বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। বিএডিসি কৃষকদের উন্নয়নে ও ফসল আবাদের লক্ষ্যে আধুনিক সেচ প্রকল্প প্রদান করছে। কিন্তু কারখানার বর্জ্যরে কারণে তার সুফল পাওয়া যাবে না এটা হতে পারে না। এ বিষয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সাথে কথা বলবো। এখানে সেচ প্রদানের জন্য খালের পানিই যথেষ্ট। প্রাকৃতিক কারণে হলে ভিন্ন বিষয় ছিলো। তারপরও আমরা চেষ্টা করবো গভীর নলকূপ বসানোর বিষয়ে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স